33.1 C
Gopālganj
শুক্রবার, জুন ২৭, ২০২৫

নড়াইলের নড়াগাতিতে ট্রলি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি: ফুঁসে উঠেছে জনতা, উঠছে জবাবদিহির প্রশ্ন

চারদিন পর, ১৬ জুন, পানিপাড়া রোডে আবারও ট্রলির নিচে প্রাণ হারান এক প্রবাসী যুবক, যিনি সাময়িক ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা ছিল তার, অথচ পরিবারকে রেখে যেতে হলো শোকের সাগরে ভাসিয়ে।

নির্বাচিত সংবাদ

- Advertisement -

নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার অন্তর্গত এলাকাগুলোতে অবৈধ ট্রলি চলাচল অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের দৌরাত্ম্যে সম্প্রতি প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক নিরীহ মানুষ। মৃত্যুর এই মিছিল জনমনে চরম উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। মানুষের এই জীবনহানির দায় কার—এই প্রশ্নে উত্তাল হয়ে উঠেছে জনমত।

ট্রলি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি: একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা

১২ জুন ২০২৫, কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া রোডে ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। এক প্রবীণ দম্পতি অবৈধভাবে চলাচলকারী একটি ট্রলির নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ট্রলিটি ছিল অতিরিক্ত গতিতে চলমান এবং চালক ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দম্পতিকে সে এতটাই দ্রুত গতিতে ধাক্কা দেয় যে, বাঁচার কোনো সুযোগই ছিল না।

চারদিন পর, ১৬ জুন, পানিপাড়া রোডে আবারও ট্রলির নিচে প্রাণ হারান এক প্রবাসী যুবক, যিনি সাময়িক ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা ছিল তার, অথচ পরিবারকে রেখে যেতে হলো শোকের সাগরে ভাসিয়ে।

মানববন্ধনে ফুঁসে উঠেছে জনসাধারণ

২০ জুন শুক্রবার বিকেলে নড়াগাতি বাজারে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে এবং দাবি জানায়—এই অবৈধ ট্রলি চলাচল অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে
মানববন্ধনে বলা হয়,

আর কত প্রাণ গেলে প্রশাসন সজাগ হবে? এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, আগামীতে আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে।”

ট্রলি চালনায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের দাপট

নড়াইলের গ্রামীণ সড়কগুলোতে ট্রলি এখন প্রধান যানবাহনে রূপ নিয়েছে, বিশেষ করে ইট, বালু ও কৃষিপণ্য পরিবহনে। কিন্তু এসব যানবাহনের চালকদের অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক অদক্ষ। এদের নেই কোনো লাইসেন্স, নেই প্রশিক্ষণ কিংবা সচেতনতা। অনেক ট্রলিতে নেই কার্যকর ব্রেকিং সিস্টেম, নেই স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণের যথাযথ সুবিধা। ফলে সামান্য অসাবধানতাই ডেকে আনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

জনগণের মুখে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—

  • কে দিয়েছে এই ট্রলি চালানোর অনুমতি?
  • কেন প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালায় না?
  • কেন অভিভাবকেরা অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে ট্রলির স্টিয়ারিং তুলে দেন?
  • দুর্ঘটনার পরে কেন দায় স্বীকার করা হয়, আগে কেন প্রতিরোধ করা হয় না?

অভিভাবক প্রশাসনের দ্বৈত ব্যর্থতা

এই প্রাণঘাতী ঘটনার জন্য কেবল অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরাই নয়, দায়ী অভিভাবকরাও, যারা শিশু বয়সী সন্তানদের হাতে বিপজ্জনক যন্ত্র তুলে দেয়। অপরদিকে, প্রশাসনের নীরবতা অনিয়মিত নজরদারি পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

স্থানীয়দের মুখে শুনি ক্ষোভের কথা—

সন্ধ্যা হলেই আমাদের সন্তানদের ঘরে ফিরতে বলে দিই, কারণ বাইরে থাকলে যে তারা বেঁচে ফিরবে না তার গ্যারান্টি নেই। ট্রলি যেন এক মরণযন্ত্র হয়ে উঠেছে।

নিরাপত্তাহীন গ্রামীণ সড়ক প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা

নড়াইল জেলার গ্রামীণ সড়কগুলো এতটাই সরু ও সংকীর্ণ যে সেখানে ভারী যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু ট্রলি, লাটা ভ্যান, অবৈধ তিন চাকার গাড়ি অহরহ চলছে। যার চালকরা বেশিরভাগই স্কুল ফাঁকি দেওয়া কিশোর বা নিরক্ষর যুবক।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই অনুপস্থিত। অধিকাংশ ট্রলির নেই হেডলাইট, নেই হর্ন, এমনকি অতিরিক্ত মাল বহনের ফলে যেকোনো সময় গাড়ি উল্টে যাওয়া বা নিয়ন্ত্রণ হারানো খুব স্বাভাবিক।

জনগণের দাবি: অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা যেসব দাবি তুলেছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক এবং জরুরি:

  • অবিলম্বে সরু রাস্তাগুলোতে ট্রলি চলাচল বন্ধ করতে হবে
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
  • বিনা লাইসেন্সে ট্রলি চালানো বন্ধ করতে হবে এবং নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে
  • প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে
  • ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যপদক্ষেপ

নড়াগাতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আশিকুর রহমান রাজন জানিয়েছেন,

আমরা ঘটনাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তবে স্থানীয় জনগণের প্রশ্ন এখনো জ্বলন্ত—

মানুষ মারা গেলে প্রশাসন জাগে কেন? আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন?

আমাদের করণীয় সচেতনতার আহ্বান

নড়াইলের সাম্প্রতিক ট্রলি দুর্ঘটনাগুলো নিছক কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি চলমান নিরাপত্তা সংকটের বহিঃপ্রকাশ। কেবল প্রশাসনের উপর ভরসা না রেখে আমাদের প্রতিটি নাগরিকের উচিত নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা:

  • অপ্রাপ্তবয়স্কদের ট্রলি চালাতে দেওয়া বন্ধ করতে হবে
  • আঞ্চলিক সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন নিরীক্ষা চালু করতে হবে
  • অবৈধ যানবাহন শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে
  • জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে স্থানীয়ভাবে ক্যাম্পেইন আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত

উপসংহার: আর কোনো প্রাণ যেন না হারায়

নড়াইলের নড়াগাতির মানুষ আজ ক্ষুব্ধ, শোকাহত ও জবাব চায়। বারবার এক প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে—কত প্রাণ গেলে প্রশাসন জবাবদিহি করবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আমাদের সবাইকে।
সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রথম দায়িত্ব। প্রশাসন, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যম—সবার যৌথ পদক্ষেপেই আমরা গড়ে তুলতে পারি একটি নিরাপদ দুর্ঘটনামুক্ত নড়াইল

- Advertisement -

আরও খবর plus!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর

Translate »