কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি :
‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ রইবো আর বেশি দিন তোদের মাজারে” হূদয় কাঁপানো এমন একটি গান গেয়েছিলেন খ্যাতনামা শিল্পী এন্ডু কিশোর। কিন্তু করিই দয়ালের ডাকে সাড়া দিয়ে বড়ই অকালে চলে গেলেন তিনি।
কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা ছিল কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের চিথলীয়া গ্রামের পৈত্রিক ভিটায় একটি সঙ্গীত একাডেমী করার। নামও ঠিক করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন প্রার্থনা কুঞ্জ। কিন্তু তার প্রাথর্না হয়তো শোনেননি ঈশ্বর।
বেশ কয়েক বছর আগে এন্ড্রু কিশোর মাদারীপুরের ঘটকচর স্কুল মাঠে শো করতে এসেছিলেন। তখন সে তার নিজের মুখে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিল, আমার পৈত্রিক বাড়ি এই স্কুল মাঠ থেকে বেশি দূরে নয়; পাশের কোটালীপাড়ায় আমার পৈত্রিক বাড়ি। আমার পরিবার পরে রাজশাহীতে সেটেল হয়।
গত সোমবার সন্ধ্যায় এই গুনী সংগীত শিল্পীর মৃত্যুর সংবাদ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এসে পৌঁছালে তার আপনজনসহ উপজেলাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই টিভির সামনে বসে এন্ডু কিশোরের মৃত্যু সংবাদ শুনেছেন। পুরোটা এলাকা জুড়ে যেন শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, এন্ডু কিশোরের পিতার নাম ক্ষিতিশ বাড়ৈ। এন্ডু কিশোররা ছিলেন ৩ ভাই বোন। ৩ ভাই বোনের মধ্যে এন্ডু কিশোর ছিল ছোট। তার বড় ভাইর নাম স্বপন বাড়ৈ। বোন শিখা বাড়ৈ। আমার কাকা ক্ষিতিশ বাড়ৈর কর্মস্থল ছিল রাজশাহী। তিনি ওখানে চিকিৎসা পেশায় জড়িত ছিলেন। ওখানেই এন্ডু কিশোরের জন্ম। তবে তার বাবার জন্ম কোটালীপাড়ায় ।
এন্ডু কিশোরের পিতা ক্ষিতিশ বাড়ৈ বরিশালে লেখাপড়া করেছেন। এর পর চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী পাস করে রাজশাহীতে কর্ম জীবন শুরু করেন। তবে তিনি তার পরিবার পরিজন নিয়ে প্রতিবছরই কোটালীপাড়ায় বেড়াতে আসতেন।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এন্ডু কিশোর স্বস্ত্রীক কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের চিথলীয়া গ্রামের পৈত্রিক ভিটায় বেড়াতে এসেছিলেন। ঘুরে বেড়িয়েছিলন এলাকা জুঁড়ে। এ সময় তিনি পৈত্রিক ভিটায় একটি ‘প্রার্থনা কুঞ্জ’ নামে একটি সংগীত একাডেমী করতে চেয়েছিলেন।
উপজেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ এই গুনী শিল্পীর এবাবে চলে যাওয়া যেন কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা এই শিল্পীর স্মৃতি রক্ষার্থে তার নামে কোটালীপাড়ায় সংগীত একাডেমি বা স্কুল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
কাকাতো ভাই পূর্ণদান বাড়ৈ বলেন “জীবনের গল্প আছে বাকী অল্প’, ‘আমার সারা দেহ খেয়োগো মাটি’, সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী এন্ডু কিশোর। তিনি এখানে একটি সঙ্গীত একাডেমী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না।
এন্ডু কিশোরের অপর এক কাকাতো ভাই এলিও বাড়ৈ বলেন, গত ৭ মাস আগে এন্ডু কিশোরের সাথে আমার শেষ কথা হয়েছে। আমাদের যে কোন পারিবারিক অনুষ্ঠানে তিনি আমাদের সহযোগিতা করতেন। বিভিন্ন সময়ে ফোন করে আমাদের খোঁজখবর নিতেন। এন্ডু কিশোর একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ বাড়ৈ বলেন, সংগীত শিল্পী এন্ডু কিশোরের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অপুরোনিয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাই এই মহান শিল্পীর নামে কোটালীপাড়ায় একটি সংগীত একাডেমি বা একটি সংগীত স্কুল স্থাপন করা হোক।
জেলা উদীচীর সভাপতি নাজমুল বলেন, সংগীত শিল্পী এন্ডু কিশোরের চলে যাওয়ার মাধ্যমে অামরা সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালাম। এ ক্ষতি আমাদের সঙ্গীত জগতের। আমার আর এমন শিল্পী আর পাবো না। সরকারের উচিত তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করে একটি সঙ্গীত একাডেমী তৈরী বরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী এন্ডু কিশোরের মৃত্যুতে দেশের সকল সংগীত প্রেমীরাই শোকাহত। দেশের এই মহান সংগীত শিল্পীর পৈত্রিক ভিটা কোটালীপাড়া। এটা সত্যিই কোটালীপাড়াবাসীর জন্য গর্বের। আমরা এই গুনী শিল্পীর স্মৃতি রক্ষার্থে কোটালীপাড়ায় একটি সংগীত একাডেমি বা সংগীত স্কুল স্থাপনের জন্য চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য: প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী এন্ডু কিশোর গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর একটি ক্লিনিকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।