নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা মোকাবেলায় গোপালগঞ্জে শেখ সাহেরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যালের হাতে নিজেদের তৈরী দেড়’শ পিচ ফেস-শিল্ড তুলে দিলেন মোংলার একদল তরুণ শিক্ষার্থী। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ডা. লিয়াকত হোসেন তপন এসব ফেস-শিল্ড রিসিভ করেছেন। এসময় সেখানে কলেজের ইন্টার্ণ-কোঅর্ডিনেটর ডা. সুভাষ চন্দ্র ভাদুরী, সহযোগী প্রফেসর ডা. সামস-ই-তাব্রিজ, সহ: অধ্যাপক ডা. পঙ্কজ কুমার মোহন্ত ও ডা. আলীনুর সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশ যখন লকডাউনে, ঠিক এমনি সময়ে করোনা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে যেসব চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের এ মহৎ উদ্যোগ।
প্রথম এ উদ্যোগ নেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সুমিত চন্দ। তিনি বাসায় বসে করোনায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অনুভব করেন এই ফেস-শিল্ডটি তৈরীর বিষয়টি এবং তৈরী করে ফেলেন শ’ খানেক ফেস-সিল্ড। ডাক্তারদের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে এই উদ্যোগে উদ্দীপ্ত হয়ে
পরবর্তীতে এগিয়ে আসেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী অর্নবখান এবং গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী শুভ রায়। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যোগ দেন রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
রিফাত, রুয়েটের শিক্ষার্থী ইরফান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শান্তনু, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত এবং শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাইয়ান সহ অনেকে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে ঘরে বসে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা তৈরী করে চলেছেন এই ফেস-শিল্ড।
ইতিমধ্যে তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, আদদীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা সদর হাসপাতাল, ফুলতলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্স, রামপাল স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্স , বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্স ও চালনা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পৌছে দিয়েছেন নিজেদের তৈরী অত্যন্ত মান-সম্পন্ন সহস্রাধিক ফেস-শিল্ড।
ইতিমধ্যে তারা তৈরী করেছেন ১৬ শ’ এর অধিক ফেস-শিল্ড। তাদের এ মহৎ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জ সাহেরা মেডিক্যাল কলেজেও তারা দেড়’শ পিচ ফেস-শিল্ড দিলেন। এছাড়াও তাদের তৈরী এসব ফেস-শিল্ড পৌঁছে দেয়া হবে শেবাচিম, সেশাখামেক, শসমেক সহ
করোনা ডেডিকেটেড বিভিন্ন হাসপাতালে। তরুন মেধাবী এই শিক্ষার্থী দলটি শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যেই এ উদ্যোগ সীমাবদ্ধ
রাখেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে করোনা সচেতনতামূলক বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে সারাদেশে এমন বেশ কয়েকটি দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে নিয়মিত।
শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ ইতিমধ্যে চারিদিকে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তাদের তৈরী এসব ফেস-শিল্ড অত্যন্ত মান-সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালগুলোতে পিপিই
পাঠালেও সেগুলোর সঙ্গে কোন ফেস-শিল্ড পাঠানো হয়নি। তাই শিক্ষার্থীদের এ মানবিক উদ্যোগকে অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সুমিত চন্দ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কুয়েটের সিনিয়ররা এবং মোংলা অঞ্চলের কিছু বিত্তবান তাদের পাশে দাড়িয়েছেন। একারণে তারা বিনামূল্যেই এসব ফেস-শিল্ড দিতে পারছেন। সুমিত আরও জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই ফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সেজন্য সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন রিসোর্স দিয়ে তাদেরকেও গাইড দিচ্ছেন যা’তে তারাও স্থানীয়ভাবে মান-সম্মত ফেস-শিল্ড বানিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারে।