গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এক যুবকের শিকলবন্দি অবস্থায় কেঁটে গেছে ২৫ বছর। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দিন কাটে বিমল হালদারের।প্রচন্ড শীতের মধ্যে তাকে একাকি রাত্রী যাপন করতে হয় ফাঁকা জায়গায় রাস্তার পাশে খাল পাড়ে।সে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামে চন্দ্রকান্ত হালদারের ছেলে।
যৌবন বয়স খেকেই তার এ অবস্থা।এখন বয়স বেড়েছে। ৫০-এর কোঠায় বয়স।এতো বছর শিকল বন্দি অবস্তায় কাটাতে কাটাতে এটাই যেন তার নিয়তিতে পরিনত হয়েছে। গরীব পরিবারের পক্ষ থেকে তারি চিকিৎসার জন্য যতাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে।অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।বাংলাদেশ ও ভারতে চিকিৎসা করিয়ে হাপিয়ে উঠেছেন পরিবার।শেষ অবধি সব বাদ দিয়ে দিতে বাধ্য হন তার পরিবার।
ছাত্র জীবনে বিমল হালদার বেশ ভালো ছাত্র ছিলেন। উপজেলার সিকির বাজার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে এস.এস.সি পাশ করে স্থানীয় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজে ভর্তি হয় বিমল হালদার। এইচ.এস.সি পরীক্ষার আগে বিমল হালদার কলেজের শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যদের সাথে অসংলগ্ন আচরণ করতে থেকে।

এরপর প্রতিবেশিদের পরামর্শে বিমল হালদারকে বিয়ে করানো হয়। বিয়ের পর কয়েক বছর ভালো থাকলেও আবার শুরু হয় অসংলগ্ন আচারন। এরই মাঝে বিমল হালদার একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তানের পিতা হয়। কিন্তু তার আচারণের কোন পরিবর্তন হয় না। আরো বাড়তে থাকে আচরনগত অবস্থা।
একটু ছাড়া পেলেই ভাংতো মানুষের ঘর-বাড়ি। যাকে সামনে পেতো তাকেই মারধর করতো। প্রতিনিয়ত প্রতিবাসিদের অভিযোগ আসতো। অভিযোগের পাল্লা যখন ভারী হয়ে ওঠে তখন মানসিক ভারসাম্যহীন বিমল হালদারকে তার পরিবারের লোকজন শিকলবন্দি করতে বাধ্য হয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু হয় বিমল হালদারের চিকিৎসা। তাকে চিকিতসা করাতে গিয়ে পরিবারটি প্রায় নিঃস্ব হয়ে যায়। এ অবস্থায় তার স্ত্রী সন্তান দু’টিকে নিয়ে বাবার বাড়ী চলে যায়। স্ত্রী,সন্তান দূরে চলে যাওয়ার পরে বিমলের আচরণ আরো খারাপ হতে থাকে। শুরু করে আশপাশে মানুষদের ঘর বাড়ী ভাংচুর। যাকে সামনে পায় তাকেই মারধর করে।এ অবস্থা সহ্য করতে না পেরে পরিবারের লোকজন বিমল হালদারকে শিকলবন্দী করে ফেলে।

বর্তমানে বাড়ীর পাশে খাল পাড়ে একটি রেইন্ট্রি গাছের নিচে কিছু ইট দিয়ে ৫ ফুট চওড়া ও ৮ ফুট দৈর্ঘ্য একটি পাকা স্থান তৈরী করে তার উপর শিকলবন্দী অবস্থায় বিমল হালদারকে রাখা হয়েছে। এখানেই বিমল হালদারকে খাবার দেওয়া হয়। এই পাকা জায়গা টুকুর উপরই তার রাত দিন কাটে। আর এখানেই দিন, মাস পেরিয়ে কেটে গেছে ২৫টি বছর।
বিমল হালদারের পরিবার ও একাবাসির দাবী বিমল হালদারকে সু-চিকিৎসা দিলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
বিমল হালদারের ভাইয়ের স্ত্রী সঞ্জিতা হালদার বলেন, কলেজে পড়াকালিন বিমল আমাদের সাথে অস্বাভাবিক আচারণ করতে থাকে। এরপর তাকে বিয়ে দেই। বিয়ের পর সে কখনো ভালো, কখনো খারাপ আচরন করতো সবার সাথে। সে পুরোপুরি সুস্থ্য না হওয়া ও মারধর করার কারনে তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। এরপর বিমল পুরোপুরি পাগল হয়ে যায়।
বিমলের বড় ভাই জগদিশ হালদার বলেন, পাবনা, ঢাকা ও ভারত সহ বিভিন্ন স্থানে বিমলের চিকিৎসা করাতে আমরা নিঃস্ব হয়েগেছি। ডাক্তার দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা দিয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে পারি নাই। ওকে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা করালে মনে হয় সুস্থ্য হয়ে উঠতো। তিনি আরো বলেন, প্রথমে ওকে ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু ঘরের সব কিছু ভেঙ্গে ফেলে। এরপর খালের পাড়ে একটি স্থান পাকা করে তার উপর প্রায় ২৫ বছর শিকলবন্দি করে রেখেছি।